আনোয়ার হোসেন ॥ হোসেন করোনাভাইরাসের কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই বন্ধ রয়েছে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলো। বন্ধের কারণে হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা প্যাকেজ চেয়েছে বরিশাল কিন্ডারগার্টেন ফোরাম। কিন্ডারগার্টেনগুলো ১৯৫২ সালে ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল বাংলাদেশে এবং ১৯৭৬ সালে নূরীয়া কিন্ডারগার্টেন বরিশালে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ধারার সূচনা করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি স্কুলগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যােগে প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেনগুলোরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
তবে বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেনগুলোর সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। যেহেতু ত্রুটি দেখভালের আলাদা কোন অথরিটি নেই। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে দলগত কিছু সংখ্যা জানা গেলেও তার বাইরেও থেকে যায় অনেক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের হাতেও রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত বিবরণ। স্কুল সংখ্য, শেণি ভিত্তিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যা ইত্যাদি। সরকারি নথীতে রয়েছে এসব স্কুলের ইএমএসআই কোড নাম্বার।
বরিশালে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কিন্ডারগার্টেনের বিভিন্ন সংগঠন। তার মধ্যে বরিশাল বিভাগব্যাপী নিয়মিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অভিভাবক ক্যাম্পেইন, বৃত্তি উৎসবসহ নানাবিধ কর্মকান্ড নিয়ে আছে বরিশাল কিন্ডারগার্টেন ফোরাম। প্রায় ৩৫০টি স্কুল এই ফোরামের আমন্ত্রনের আওতায় রাখে তার প্রতিটি কর্মকান্ডে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক ও লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সৃষ্ট প্রাথমিক শিক্ষার এ স্তরটি একেবারেই নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন বরিশাল কিন্ডারগার্টেন ফোরামের সাধারন সম্পাদক আবদুস সোবহান বাচ্চু। আর এই অর্থের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের বেতন। এ বেতন থেকেই নির্বাহ করা হয় বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারির বেতন, ইলেকট্রিক বিলসহ নানাবিধ খরচ। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং কয়েক ধাপে তা ৫ মে পর্যন্ত বেড়েছে। গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে তাহার ধারাবাহিতায় ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে এসকল কিন্ডারগার্টেনগুলোও বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে তাদের সকল আয়ের পথ। বকেয়া হয়ে গেছে বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারির বেতনসহ সবকিছু। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এর সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষক-কর্মচারিরা। মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপে রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালকবৃন্দ। কিভাবে পরিশোধ করবেন বাড়ি ভাড়া, শিক্ষকদের বেতন। কিভাবে এই করোনাউত্তোর সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানকে আবার সচল করে তুলবেন তা ভেবেই অনেকে দিশেহারা। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচালক তাদের হাতে থাকা শেষ অর্থটুকু ব্যায় করে নিঃশ্ব হয়ে বসে আছেন।
এমতাবস্থায় দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এ কিন্ডারগার্টেনগুলোকে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল শিক্ষকদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় প্রাথমিক শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি মুখ থুবরে পড়বে। বরিশাল কিন্ডারগার্টেন ফোরামের সাধারন সম্পাদক আবদুস সোবহান বাচ্চু প্রতিনিধিকে বলেন, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুন কড়ে তৈরি কিন্ডারগার্টেনগুলো।
Leave a Reply